এশার নামাজ ১৭ রাকাত: একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড

ইসলাম ধর্মে নামাজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মুসলমানদের উপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়েছে। এদের মধ্যে এশার নামাজ দিনের শেষ নামাজ হিসেবে ধরা হয় এবং এটি অন্যান্য নামাজের তুলনায় দীর্ঘতম। অনেকেই জানেন না যে এশার নামাজে মোট কত রাকাত পড়তে হয়। এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব এশার নামাজ ১৭ রাকাত বিষয়টি নিয়ে, যাতে আপনি সহজেই বুঝতে পারেন এই নামাজের প্রতিটি ধাপ এবং এর মাহাত্ম্য।

এশার নামাজের রাকাত বিভাজন

এশার নামাজ মোট ১৭ রাকাত নিয়ে গঠিত। এই রাকাতগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে — ফরজ, সুন্নত, নফল এবং বিতর। নিচে তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হলো।

১. চার রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা

এশার নামাজ শুরু হয় চার রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা দিয়ে। এই সুন্নত রাসূল (সা.) নিয়মিত পড়তেন এবং তাঁর সাহাবীগণকেও এই রাকাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সুন্নতের এই অংশটি না পড়লেও নামাজ বাতিল হয় না, তবে নিয়মিত না পড়লে গুনাহ হতে পারে।

২. চার রাকাত ফরজ

এরপর পড়া হয় চার রাকাত ফরজ নামাজ, যা এশার মূল বাধ্যতামূলক অংশ। এই চার রাকাত ফরজ নামাজ জামাআতের সঙ্গে মসজিদে পড়া উত্তম, তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগতভাবেও আদায় করা যায়। এই ফরজ নামাজই আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজকৃত ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।

৩. দুই রাকাত সুন্নত

ফরজ নামাজের পরে পড়া হয় দুই রাকাত সুন্নত, যাকে সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদা বলা হয়। এই রাকাতগুলো রাসূল (সা.) কিছু সময়ে পড়তেন এবং কিছু সময়ে পড়তেন না, তবে পড়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।

৪. দুই রাকাত নফল

নফল নামাজ ঐচ্ছিক, তবে এশার পরে এই দুই রাকাত পড়লে অতিরিক্ত সওয়াব পাওয়া যায়। এটি মানুষের ইবাদতের প্রতি আগ্রহ ও একাগ্রতা প্রকাশ করে।

৫. তিন রাকাত বিতর

এশার নামাজের সর্বশেষ অংশ হলো তিন রাকাত বিতর নামাজ। এটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পড়া উচিত। বিতর নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদা হিসেবে বিবেচিত, এবং রাসূল (সা.) কখনোই এটি বাদ দিতেন না। এই নামাজে তৃতীয় রাকাতে কুনুত দোয়া পড়া হয়।

এশার নামাজ ১৭ রাকাত পড়ার গুরুত্ব

এশার নামাজ ১৭ রাকাত পড়ার পেছনে রয়েছে গভীর তাৎপর্য এবং বহু সওয়াব। মুসলিমদের জীবনকে সুশৃঙ্খল রাখার জন্য আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারণ করেছেন। দিনের শেষে এশার নামাজ মানুষকে সব ব্যস্ততা থেকে দূরে সরে আল্লাহর কাছে মাথা নত করার সুযোগ দেয়। এশার পূর্ণ ১৭ রাকাত পড়লে ব্যক্তির আত্মা প্রশান্ত হয় এবং রাতের ঘুম মধুর হয়।

আধ্যাত্মিক শান্তি ও ঘুমের পূর্ব প্রস্তুতি

রাতের শেষ ইবাদত হওয়ায় এশার নামাজ আত্মিক প্রশান্তি এনে দেয়। যারা পূর্ণ ১৭ রাকাত আদায় করে, তারা মনে করেন তাদের দুনিয়ার কাজ শেষে আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ সম্পন্ন হয়েছে। এটি ঘুমের পূর্বে আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তা অনুভব করার একটি উপায়।

নিয়মিত ১৭ রাকাত পড়ার উপকারিতা

১. ইমান দৃঢ় হয়
২. দুনিয়াবি চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
৩. রাতের সময় বরকতময় হয়
৪. আত্মা শান্তি পায়
৫. নেক আমল বৃদ্ধি পায়

এশার নামাজের বিধান ও মাসআলা

জামাআতের গুরুত্ব

এশার ফরজ নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করাটা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। পুরুষদের জন্য মসজিদে গিয়ে জামাআতের সঙ্গে নামাজ পড়া উত্তম। মহিলারা ঘরে পড়লেও পূর্ণ সওয়াব পেয়ে থাকেন।

বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম

তিন রাকাত বিতর নামাজ একসঙ্গে পড়া হয়, তবে তৃতীয় রাকাতে কুনুত দোয়া পড়তে হয়। কেউ কেউ দুই রাকাত পড়ে সালাম ফেরান, তারপর এক রাকাত পড়েন। তবে হানাফি মাযহাবে একসাথে তিন রাকাত পড়াই প্রচলিত।

সুন্নত ও নফলের ফজিলত

সুন্নত এবং নফল রাকাতগুলো পড়লে অতিরিক্ত নেকি অর্জিত হয়। এগুলো মূলত নামাজের পূর্ণতা বৃদ্ধি করে এবং রুহানিয়াতকে দৃঢ় করে।

কিছু প্রচলিত প্রশ্ন ও ভুল ধারণা

এশার নামাজ কি শুধু ফরজ হলেই হয়?

না, এশার নামাজের পূর্ণতা আসে যখন পুরো ১৭ রাকাত পড়া হয়। শুধু চার রাকাত ফরজ পড়া ফরজ দায়িত্ব পূরণ করলেও পূর্ণ ইবাদতের সৌন্দর্য পাওয়া যায় না।

বিতর পড়া না গেলে কি নামাজ পূর্ণ হয় না?

বিতর না পড়লে গুনাহ হতে পারে, বিশেষ করে যদি তা ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেয়া হয়। তাই সম্ভব হলে কখনোই বিতর বাদ না দেয়াই উত্তম।

১৭ রাকাত না পড়লে গুনাহ হয়?

ফরজ ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা রাকাত না পড়লে গুনাহ হয়। তবে নফল এবং গায়রে মুয়াক্কাদা পড়া ঐচ্ছিক, তবে নেকির কারণে পড়া উচিত।

উপসংহার

ইসলামী জীবনে প্রতিটি নামাজের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তবে এশার নামাজ দিনের শেষ ও দীর্ঘতম হওয়ায়, এর মধ্যে অতিরিক্ত রাকাত ও ইবাদত করার সুযোগ রয়েছে যা একজন মুসলিমকে আল্লাহর আরও নিকটবর্তী করে তোলে। সুন্নত, ফরজ, নফল এবং বিতর মিলিয়ে এশার নামাজ ১৭ রাকাত পড়ার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার দিনটি পূর্ণ করে, আত্মিকভাবে উন্নত হয় এবং পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *